দীর্ঘসময় ধরে বিরতিহীন বসে থাকার ফলে আয়ু কমে যায় তাই সাবধান! বসে থেকে কেন ডেকে আনবেন অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি।
সারাদিন বসে থাকা ক্ষতিকর তা আমরা অনেকেই জানি, কিন্তু এই বসে থাকা যে এক ধরণের রোগ তা হয়তো জানি না। বিশেষজ্ঞরা একে ‘সিটিং ডিজিজ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। তারা বলছেন, এই রোগ নির্ণয়যোগ্য কোন ব্যাধি না কিন্তু একনাগাড়ে দীর্ঘসময় বসে থাকার ফলে ব্যাকপেইন ছাড়াও ক্যান্সার, হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিসের মত রোগ ডেকে আনছে। একনাগাড়ে বসে থাকার ফলে মানুষের আয়ু কমে যাচ্ছে বলেও জানাচ্ছেন গবেষকরা।
আসুন বিস্তারিত জানি ‘সিটিং ডিজিজ’ কি
যখন আমরা দীর্ঘক্ষণ বসে কাটাই তখন আমাদের দেহের পেশিগুলো নড়াচড়া করার সুযোগ পায়না। এতে স্বাভাবিকভাবে রক্ত চলাচল বাধা পায়। আমাদের আধুনিক সেডেনটারি বা অলস জীবনযাপনের ফলে নানারকম অসংক্রামক রোগ দেখা দিচ্ছে। এসব রোগ জীবাণুঘটিত নয়, শুধুমাত্র অলস বসে থাকার ফলে দেখা দিচ্ছে । দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে শরীরের রক্ত চলাচল কম হওয়া ও স্বাভাবিক বিপাকক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হওয়া এর মূল কারণ।
বিরতিহীন বসে থাকার ফলে কী ঘটছে?
যারা বেশি সময় চেয়ারে বসে কাটায় তারা, তুলনামূলক কম সময় বসে কাটায় এমন লোকের চাইতে ১১২ শতাংশ বেশি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছে। ১৪৭ শতাংশ বেশি আছেন হৃদরোগের ঝুঁকিতে। আর ৪৯ শতাংশ বেশি আছেন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে।
এগুলো ছাড়াও উ"চমাত্রার কোলেস্টেরল, লোয়ার ব্যাক পেইন, কোলন ক্যানসার ও রক্তচলাচলে ধীরগতির মত সমস্যা দেখা দিচ্ছে দীর্ঘসময় বিরতিহীন বসে থাকার অভ্যাসের উপসর্গ হিসেবে।
সা¤প্রতিক সময়ে পরিচালিত ‘উইসকনসিন ডিসকভারি’ জানাচ্ছে এমনকি যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে তারাও যদি দীর্ঘন বিরতিহীন বসে কাটায়, তারাও একই রকম স্বা¯'ঝুঁকিতে আছে। অলস জীবনাযপনের নেতিনাচক প্রতিক্রিয়ার উপর পরিচালিত নানা গবেষণা গবেষকদের মাঝে নতুন শব্দ চালু হয়েছে ‘একটিভ কাউচ পটেটো’ অর্থাৎ যারা দীর্ঘসময় অফিসে বা বাড়িতে চেয়ারে বসে কাটায়। ভেবে দেখুন, আপনি নিজেও একজন ‘কাউচ পটেটো’ কিনা।
কাউচ পটেটো হওয়ার বা বসে থাকার বদভ্যাস বাড়াচ্ছে ক্যানসারের ঝুঁকি। বিশেষত ব্রেস্ট ক্যানসার ও কোলন ক্যানসার। নির্দিষ্ট বিরতিতে শারীরিক গতিবিধি ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমায় বলেও জানান তিনি। আর ক্যানসারের ঝুঁকি নারীদের েেত্র ৯৪ শতাংশ আর পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ নারীদের নিজেদের জীবনযাপন নিয়ে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। হ
বসে থাকা আপনার শরীরে কি বিপদ ডেকে নিয়ে আসছে
যখনি আপনি বসে থাকেন:
পায়ের মাংশপেশীতে ইলেট্রিক্যাল এক্টিভিটি বন্ধ হয়ে যায়
প্রতি মিনিটে ক্যালোরি পুড়ে যাওয়ার ক্ষমতা এক মিনিটেই পড়ে যায়
ফ্যাটকে যে এনজাইম ভাঙতে সাহায্য করে তার ক্ষমতা ৯০% কমে যায়
পরের দুই ঘণ্টায়
ভালো কোলেস্টেরল ২০% হ্রাস পায়
যেসব মানুষ দাঁড়িয়ে বা চলাচলের কাজ করেন তাদের তুলনায় যেসব মানুষ বসে থাকার কাজ করেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি দ্বিগুন
সিটিং ডিজিজ-এর বিপদ
আমেরিকার ৮৬ শতাংশ কর্মজীবী সারাদিন বসে কাজ করেন।
যখন বাড়িতে এবং বিশ্রামে তাদের সময় কাটে তারা অনেকেই ৮-১৩ ঘণ্টা কাটান
যারা ডেস্ক ওয়ার্ক করেন তাদের গড়ে ৮ মাসে ১৬ পাউন্ড ওজন বাড়ে
ঘণ্টা প্রতিদিন
এটা কি ধরণের সমস্যা?
সারাদিন বসে কাটালে বা বসার কাজ করলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়:
ক্যান্সার, স্থুলতা, পেশী সংক্রান্ত সমস্যা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, অকাল মৃত্যু
যেসব নারীরা ৬ ঘণ্টার বেশি বসে থাকেন তারা ৯৪% মারা যান আগে তাদের তুলানায় যারা দিনে তিন ঘণ্টা বসে থেকেছেন
অসক্রিয় পুরুষরা ৪৮% বেশি মারা যান সক্রিয় পুরুষদের তুলনায়
যে সমস্ত কর্মজীবী কম সক্রিয় জীবন যাপন করেন
তাদের ঝুঁকি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায় কোলন ক্যান্সার
কোলন ক্যান্সার
সিটিং ডিজিজ
যারা বসে থাকেন- স্বাস্থ্যবান হোন অথবা অধুমপায়ী হোন, তারা প্রত্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত
১০ বছরে
এমনকি যারা নিয়মিত ব্যয়াম করেন অথচ বেশিরভাগ সময় বসে থাকেন তাদেরও
আয়ু অন্যদের তুলনায় কমে
যারা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কাজ করেন, তারা যেন প্রতি ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পরপর উঠে দাঁড়ান বা হাঁটাহাঁটি করেন। অফিসে থাকাকালীন ফাইল আনা নেওয়া, চা বা পানি আনা নেওয়া ইত্যাদি কাজ নিজে করলে কিছুক্ষণ পরপর ওঠা হবে বলে পরামর্শ দেন -প্রফেসর ডা. আব্দুস সালাম
৬টি কারণ
বসে থাকার কাজ আপনার স্বাস্থ্যর জন্য কতটা খারাপ
হৃদরোগ
একজন কার্ডিওলোজিস্ট হিসেবে আমি জানি অতিরিক্ত বসে থাকলে হৃদযন্ত্রে কিভাবে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রতিদিন বসে থাকার অভ্যাস যাদের তাদের উচ্চ রক্তচাপ বাড়ে ও কোলেস্টেরল-এর মাত্রাও বাড়ে। যারা শারীরিকভাবে সক্রিয় নন তারা অন্যাদের তুলনায় দ্বিগুণ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়
যখন বেশি সময় বসে থাকবেন তখন আপনার শরীরের কাজগুলো হ্রাস পেতে থাকে। একইভাবে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। তাই মাঝেমধ্যেই বসা থেকে উঠে পড়–ন এবং চলাচল করুন।
ঘাড় এবং ব্যাকপেইন
কম্পিউটারে কি-বোর্ডে অনেক্ষণ কাজ করলে সার্ভিকাল ভার্টিব্রাতে স্থায়ীভাবে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। এমনকি অনেক্ষণ টেলিফোন বা সেলফোন কানে রেখে কথা বললেও একই সমস্যা দেখা দেয়। যত বেশি বসে থাকবেন ততই লাম্বার ডিস্কের ক্ষতির ঝুঁকি নেবেন।
পেশী এবং হাড়ের সমস্যা
যখন আপনি বসে থাকবেন তখন পেটের পেশী অব্যবহৃত হওয়ায় আপনার মেরুদন্ডে চাপ দেবে। হাঁটা ও দৌড়াদৌড়ি আপনার কোমর (হিপ) এবং শরীরের নি¤œাংশের হাড় স্বাভাবিকভাবে কাজ করবে।
ক্যান্সার
কোলন, ব্রেস্ট এবং এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের সাথে বসে থাকার একটি সম্পর্ক আছে। যারা জীবন-যাপনে সক্রিয়তা বজায় রাখেন, তারা তুলনামূলকভাবে এসব সমস্যায় কম ভোগেন। কারণ সক্রিয়তা-অর্থাৎ বসে না থেকে চলাচলের মধ্যে থাকলে এন্টিঅক্সিডেন্ট রিলিজ হয়ে শরীরের কোষের ক্ষতিকে প্রতিহত করে।
কম রক্ত সঞ্চালন
আপনি যখন দীর্ঘক্ষণ বসে থাকবেন তখন আপনার শরীরে কম রক্ত সঞ্চালন ঘটবে। এ কারণে পায়ে পানি এসে পাঁ ফুলে যাবে। ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস, পায়ের পাতা ফোলা এবং ভেরিকোস ভেইন রোগ বসে থাকার কারণে হয়ে থাকে।
0 Comments